খামখেয়ালী সভা: এক নজরে
=================
‘খামখেয়ালী সভা’ একেবারেই খামখেয়ালীর কোনো বিষয় নয়। বাঙালি জাতির মহত্তম মনীষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন্দ্র করে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার একটি মননধর্মী সংগঠন খামখেয়ালী সভা।
উৎস রবীন্দ্রনাথেই
===========
খামখেয়ালী সভা নামে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ একটি আড্ডা শুরু করেন ১৮৯৭ সালে কলকাতায়। ‘ডাকাতের দল’ নামে সে সময়কার একটি চমকপ্রদ সংগঠনের উত্তরসূরি হিসেবে খামখেয়ালী সভার জন্ম। ডাকাতের দল একেক সময় একেক সভ্যকে চিঠি দিয়ে জানাতো: আজ তার বাড়িতে ডাকাতি হবে- অর্থাৎ সবাই মিলে ওই সভ্যের বাড়িতে আড্ডা জমাবে ও খাবে। ডাকাতের দলের বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ শুরু করেন সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক আড্ডা খামখেয়ালী সভা। রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, জগদীশ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো রথী-মহারথীরা ছিলেন ওই সভার সভ্য। রবীন্দ্রনাথ ওই সভায় তার নতুন নতুন লেখা পড়ে শোনাতেন। গান করতেন ডিএল রায় ও অতুল প্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে, থাকতো খানাপিনার আয়োজন। এক একদিন সভা বসতো একেক সভ্যের বাড়িতে। বছর দু’য়েক চলেছিল সভাটি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ প্রতিষ্ঠা করলে আর রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারি দেখশোনা করতে চলে এলে বিলুপ্তি ঘটে খামখেয়ালী সভার। তবে রবীন্দ্রনাথের অনেক লেখার প্রথম পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে খামখেয়ালী সভা।
১১৫ বছর পর ঢাকায়
=============
১১৫ বছর পর ঢাকায় ফের শুরু হয়েছে খামখেয়ালী সভা। মাহমুদ হাশিম আহ্বায়ক, আঁখি সিদ্দিকা যুগ্ম আহ্বায়ক ও ফয়সাল ইবনে জামানকে সদস্যসচিব করে গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি খামখেয়ালী সভার আড্ডা শুরু হয় যুগ্ম আহ্বায়ক আঁখি সিদ্দিকার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসায়। আড্ডার উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেন
তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে কোলাহল
সুধাসাগরের তীরেতে বসিয়া পান করে শুধু হলাহল।
রবীন্দ্রনাথ এ মর্মবেদনার কথা জানিয়েছেন তার জীবনদেবতাকে। জীবন-সুধাসাগরের তীরে বসে মানুষ শুধু হলাহল পান করছে- কবির কাছে এ এক গভীর সন্তাপের বিষয়। এ দুটি চরণ রবীন্দ্রনাথকে ঘিরেও আমাদের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে করে খামখেয়ালী সভা । বিপুল রবীন্দ্রসাহিত্যের সুধাসিন্ধুর তীরে বসে আমরা বিস্তর কোলাহল করছি বটে কিন্তু তাতে কতখানি অমৃত আর কতখানি গরল মিলছে সে প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। সরল গদ্যে বলা যায় খামখেয়ালী সভা মনে করে সুখদুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সঙ্কটে-সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ আমাদের দিশারি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৈন্যের এ সময়ে অতীতের যে কোনো সময়ের মতোই এখনো তিনি প্রাসঙ্গিক। খামখেয়ালী সভা মনে করে রবীন্দ্রমনীষার সবগুলো দিক আজও পরিপূর্ণ রূপে আবিষ্কৃত হয়নি। সভার সভ্যরা বিচার ও বিশ্লেষণমুখী পঠনপাঠনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে আবিষ্কারে ব্রতী হবেন। নিজেদের ঋদ্ধ করার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক চেতনা এবং তার অনিন্দ্য শিল্পবোধের প্রসারে কাজ করবে খামখেয়ালী সভা।
খামখেয়ালী সভার কার্যক্রম
=================
মাসে একবার খামখেয়ালী সভার আড্ডা বসে। মাসের তৃতীয় শুক্রবার বিকালে। নির্ধারিত পাঠের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন ও মুক্ত আলোচনা আড্ডার মূলপর্ব। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খামখেয়ালী সভার সভ্যেরা। একজন আমন্ত্রিত আলোচক থাকেন। আলোচনা পর্বের পরে থাকে গান-কবিতা পর্ব। খামখেয়ালী সভার সভ্য ও আমন্ত্রিত শিল্পীরা এ পর্বে অংশ নেন।
খামখেয়ালী সভার স্বল্পমেয়াদি কর্মসূচি
======================
১. প্রতিমাসে নিয়মিত আড্ডার আয়োজন করা।
২. সভার সভ্যদের নির্ধারিত পাঠের ওপর প্রবন্ধ লেখায় উৎসাহিত করার মাধ্যমে নতুন লেখক তৈরিতে সহায়তা দেয়া।
৩. খ্যাতিমান আলোচক ও শিল্পীদের পাশাপাশি নবীন আলোচক ও শিল্পীদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি করা।
৪. সভার কার্যক্রম নিয়ে বছরে একটি স্মরণিকা ও লিখিত প্রবন্ধগুলো নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা।
খামখেয়ালী সভার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি
=======================
১. রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলা। খামখেয়ালী সভার সভ্যসহ যে কোনো গবেষক ( অনুমতি সাপেক্ষে) লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারবেন।
২. খামখেয়ালী সভাকে একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া। রবীন্দ্র গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষকদের বৃত্তি প্রদান করা। ‘টেগোর স্টাডিজ’ বিভাগে অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনে সভ্যদের বৃত্তি দিয়ে বিশ্বভারতীতে পাঠানো।
৩. রবীন্দ্রসাহিত্যের পাশাপাশি বাংলা ও বিদেশী সাহিত্যের নির্বাচিত পঠনপাঠন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
৪. খামখেয়ালী সভার সভ্যদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক দল গঠন।
৫. খামখেয়ালী সভায় শিশুদের আড্ডা প্রতিষ্ঠা। সম্ভাব্য নাম ‘খাপছাড়া’।
৬. খামখেয়ালী সভার একটি প্রকাশনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা।
৭. খামখেয়ালী সভাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। কেউ খামখেয়ালী সভার আদলে সভা করতে চাইলে তাদের সম্ভাব্য সব সহযোগিতা দেওয়া।
৮. বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার এবং অনুবাদ ও তুলনামূলক সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বেশি করে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ।
৯. খামখেয়ালী সভার কার্যালয় ও নিজস্ব ভবন নির্মাণ।
খামখেয়ালী সভার সাংগঠনিক রূপ
=====================
খামখেয়ালী সভা সভ্যদের চাঁদা এবং দেশী-বিদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানে ট্রাস্ট আকারে পরিচালিত হবে।
No reviews yet. Be the first to add a review.